বিজ্ঞাপন

ক্রমান্বয়ে বিএনপি কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে : রিজভী

May 26, 2018 | 2:11 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মাদকবিরোধী অভিযানে ক্রমান্বয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার (২৬ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গত ১১ দিনে এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মতো মারা গেছেন। গত রাতেও ৫ জেলায় ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছন ৭ জন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযোগ—এরা সবাই মাদকের সঙ্গে যুক্ত।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বিষয়টিকে পরিকল্পিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গোটা দেশকে হত্যার বধ্যভূমিতে পরিণত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে মাদক নির্মূলের নামে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা সকলের জন্য রীতিমতো উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে।’

‘এখন ক্রমান্বয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হচ্ছে এবং নতুন করে টার্গেট করা হচ্ছে’—অভিযোগ রিজভীর।

তিনি বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে একদিকে সরকারি চক্রান্তের বাস্তবায়ন হচ্ছে, অন্যদিকে নিরীহ লোকদের ধরে হত্যা ও হত্যার ভয় দেখিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদের আগে রমরমা বাণিজ্য করছে। প্রত্যেক ঈদ মওসুমে সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ধরনের রমরমা বাণিজ্যের সুযোগ করে।’

বিজ্ঞাপন

বাতাসে বারুদের পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে সরকার নিজের জন্য মহা বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয় যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘দেশজুড়ে মাদক বিরোধী যে অভিযান চলছে, সেখানে পুলিশ তাদের ইচ্ছামতো সাধারণ মানুষদের, বিশেষ করে কোথাও কোথাও বিএনপিসহ বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ধরে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে, হয়রানী করছে এবং দাবিকৃত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদেরকে নির্মমভাবে ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।’

 ‘যদিও বলা হচ্ছে তালিকা করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা। আসলে মাদক ব্যবসায় যারা গডফাদার তারা মূলত আওয়ামী লীগেরই লোক। আর সেই কারণেই তারা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে’—অভিযোগ রিজভীর।

তিনি বলেন, ‘এই সাড়ে নয় বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসার নেপথ্যের কারিগররা বিদেশে আয়েসি জীবন-যাপন করছেন অথবা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হয়ে দেশেই বসবাস করছে। টেকনাফের সংসদ সদস্য বদিসহ আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীর নাম গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলেও এখনও পর্যন্ত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

দেশে মাদক বিস্তারের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে রিজভী বলেন, ‘তাদের আমলেই সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে মাদকের চালান ঢুকছে অত্যন্ত নিরাপদে। সীমান্ত দিয়ে যারা মাদক আমদানী করছে তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের লোক, কিংবা তাদের সমর্থিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য।’

তিনি বলেন, গণমাধ্যমে এই তালিকা তো ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এখন মাদক নির্মূলের নামে সরকারের মন্ত্রীদের যে মায়াকান্না চলছে তা সিনেমার অভিনব দৃশ্যের মতো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠী দারুণ উল্লসিত ও উত্তেজিত।’

‘তাদের লোকজনরাই আমদানীকারক, ব্যবসায়ী এবং যুবসমাজকে ধ্বংসকারী। এখন আবার সেই সরকারই চালাচ্ছে মাদক নির্মূলের অভিযান। এ যেন সাপ হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ার মতো ঘটনা। যাদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে হয়তো কিছু মাদক বহনকারী থাকতে পারে যারা হতদরিদ্র কিন্তু প্রভাবশালী গডফাদাররা তো অধরাই থেকে যাচ্ছে’—বলেন রিজভী

তিনি বলেন, ‘বিএনপি মাদক বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে নয়। আপনারা প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা নয়। বিচার বহির্ভূত হত্যার এই মহৌৎসব আইন বিরোধী, নৈতিকতা বিরোধী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহসাংগঠনিক সম্পাদ আবদুস সালাম আজাদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমীনুল ইসলামসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এজেড/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন